চাঁদের পাহাড়
---------------
প্রথমত ধন্যবাদ ভেঙ্কটেশ ফিল্মস কে - লাভ-লোকসান এর জটিল অঙ্ক ভুলে গিয়ে এই ছবি তৈরির মূল প্রতিবন্ধকতা দূর করার জন্য। বাঙালির অত্যন্ত প্রিয় এই উপন্যাস এর সেলুলয়েড-আখ্যান নতুন প্রজন্ম কে যে আরো একবার বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধায়ের অনুগ্রাহী করে তুলবে - আমি আশাবাদী।
"চাঁদের পাহাড়" আমাদের এত প্রিয় কেন? বাঙালি সাহিত্যে নায়কের বুদ্ধিমত্তার প্রাচুর্য বিরামহীন হলেও, শংকর তার দুঃসাহসিকতায় এক ও অনন্য - এখানেই সে বাঙালির গর্ব। আফ্রিকার সুনিপুন বর্ণনা এবং বুনিপ এর এক অচীন ভয় - আমাদের ছোটবেলার নরম মনমাটিতে রেখে গেছে তার সুবিশাল পায়ের ছাপ। মশারির ভেতর ঢুকে বুনিপের ভয় পাবার স্মৃতি তাই থেকে গেছে মনের এক বিশেষ অলিন্দে।
সত্যজিত রায় আনন্দ পাবলিশার্স এর "চাঁদের পাহাড়" এর প্রকাশন এর প্রচ্ছদ এঁকেছিলেন। তাঁর এই ছবিটি বানাবার ইচ্ছা সুবিদিত - কিন্তু তিনিও বুঝেছিলেন যে আরাবল্লী পর্বত কে রিখ্তর্স্ভেল্ড বলে চালালে - উপন্যাসের প্রতি অবিচার হত। সত্যজিতবাবু এ ছবি বানালে শংকর কে হতেন? [ ভাবুন - আমার অনুমান, "মৃগয়া" র মিঠুন চক্রবর্তীর মাজাঘষা অবতার]
ছবির সিনেমাটোগ্রাফি ঝকঝকে, ব্যাকগ্রাউন্ড মিউসিক মানানসই। পেশীবহুল, সাদাসিদে দেব - শংকর হিসেবে যথেষ্ট যুতসই - কারণ এ চরিত্রে যতটা ইমোশন, তা ব্যাকগ্রাউন্ড ন্যারেটিভ। তবে দেব - তার অভিনয় এর দুর্বলতা স্থানে স্থানে প্রকাশ করেছেন - এই দিকটা প্রত্যাশিত থাকায়, খুব একটা চমকাতে হয় না। তবুও দেব এর সামগ্রিক প্রচেষ্টা - প্রশংসনীয়। আলভারেজ কে চিন্সুরাহ -তে জন্মাতে বাধ্য করে, তাকে দিয়ে বাংলা বলিয়ে - দর্শকদের যে সুবিধার কথা ভেবেছিলেন পরিচালক মশাই, তা বরং ওই ভজকট বাংলা উচ্চারণ এ দুর্বিসহ হয়ে ওঠে। টুকটাক গল্পের সংযোজন - মেনে নেবার মত। কিন্তু সবচেয়ে বেমানান বুনিপ নিজে। ওই ঝকঝকে আফ্রিকা র মধ্যে গ্রাফিক্স এর বুনিপ বড়ই আলটপকা। সিনেমায় ক্লাইমেক্স সঠিকভাবে ধরে রাখতে না পারায়, এর দৈর্ঘ্য কিছুটা বড় মনে হলেও - আসলে কিন্তু গল্পের বেশ কিছু পুনরাবৃত্তিমূলক অংশ পরিচালক বেশ নিপুন হাতে ছোট করেছেন। গল্পটা সাম্প্রতিককালে পড়া থাকলে, আপনি মানতে বাধ্য যে এই ওভারঅল সিনেমাটাইজেসনর প্রয়াস প্রশংসনীয়। মোটমাট, টানটান রুদ্ধশ্বাস উত্তেজনার প্রত্যাশা আপনাকে হতাশ করবে - কিন্তু ছোটবেলার এক অমূল্য স্মৃতিকে একবার একটা মানানসই সেলাম ঠুকতে গেলে আনন্দই পাবেন।।